বিচ্ছেদ আর ফিরে আসা – পর্ব ৪ (শেষ পর্ব)
কৌশিক আর অর্পিতার জীবনের গল্পটা যেন এক চিরকালীন যাত্রা। তারা একে অপরকে ভালোবাসার, শ্রদ্ধা করার, এবং সব কিছুর মধ্যে একে অপরকে বোঝার শিক্ষা পেয়েছিল। তাদের জীবনে অনেক তিক্ত মুহূর্ত ছিল, কিন্তু তারা একে অপরকে ফিরে পেয়েছিল। জীবন শুরু হয়েছিল নতুনভাবে, যেখানে তারা একে অপরের পাশে ছিল, সুখ-দুঃখে একে অপরকে সমর্থন দিচ্ছিল। কিন্তু জীবনের চিরন্তন সত্য, কেউ না কেউ চলে যায়।
অপ্রত্যাশিত অন্ধকার
একদিন, কৌশিক কাজ থেকে ফিরে এসে অর্পিতার ফোনে বার্তা পেল—“অর্পিতা অসুস্থ, তাকে দ্রুত হাসপাতালে নিতে হবে।” প্রথমে কৌশিক ভাবতে পারেনি, তার মাথায় কোনো চিন্তা আসছিল না। এটি ছিল এক অনির্দেশিত খবর, যা তার জীবনের সমস্ত আনন্দ মুছে ফেলেছিল। কৌশিক তাড়াতাড়ি হাসপাতালে পৌঁছানোর পর চিকিৎসকরা তাকে জানান, অর্পিতার অবস্থার অবনতি ঘটেছে। তার শরীরে এক দুর্বিপাক রক্তরোগ সঙ্কট তৈরি হয়েছে, এবং চিকিৎসকরা জানালেন, তার বেঁচে থাকার সম্ভাবনা খুব কম।
কৌশিকের মনে হচ্ছিল যেন পৃথিবীটাই থেমে গেছে। সে জানতো, অর্পিতা তার জীবনের এক অমূল্য রত্ন। তাদের সম্পর্কের প্রতিটি মুহূর্তই ছিল অনেক মূল্যবান। কিন্তু আজ, এক অন্ধকার মুহূর্তে, সে নিজেকে হারিয়ে ফেলেছিল।
সঙ্গে থাকার প্রতিশ্রুতি
অর্পিতার শয্যার পাশে কৌশিক বসে ছিল। তার চোখে পানি ছিল না, শুধু এক দীর্ঘশ্বাস ছিল—এক দীর্ঘ অব্যক্ত বেদনা। অর্পিতা একটু হেসে বলল, “কৌশিক, আমি জানি তুমি পাশে আছো, কিন্তু তুমি জানো কি? আমাদের সম্পর্কটা ছিল ঠিক সেই গল্পের মতো, যেখানে কোনো এক রাত্রে পূর্ণতা আসে। তুমি আর আমি—আমরা ফিরে এসেছি, কিন্তু জীবন কখনো ঠিকঠাক হয় না। এটা যেন এক অজানা পথ যেখানে..."
কৌশিক তার হাত ধরে, কাঁপা কাঁপা গলায় বলল, “না, অর্পিতা। তোমাকে আমি হারাতে চাই না। তুমি আমার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মানুষ। তুমি তো জানো, আমরা একে অপরকে ছেড়ে যেতে পারি না।”
অর্পিতা তার হাতটা শক্ত করে ধরে বলল, “আমি জানি, কৌশিক। আমাদের সম্পর্ক ছিল বিচ্ছেদ আর ফিরে আসার মধ্যে, কিন্তু আমি চাই, তুমি জানো, যেখানেই আমি চলে যাই, আমি তোমার সাথে আছি। আমি তোমাকে ভালোবাসি। জীবনের পরিসীমা যদি খুব ছোট হয়, তবুও এই ভালোবাসা চিরকাল থাকবে। তুমি শুধু একে অপরকে ভুলে না গিয়ে এগিয়ে যাও।”
কৌশিকের চোখে পানি এল, তার মনে হচ্ছিল যেন অর্পিতার কণ্ঠে কোনো এক শক্তি আছে, যা তাকে শান্ত করে। কিন্তু এক মুহূর্তে, কৌশিক বুঝতে পারল যে, সে হারাতে চলেছে।
অর্পিতার চলে যাওয়া
সন্ধ্যা বেলা, হাসপাতালের সাদা দেয়ালগুলোকে আলোকিত করতে পারেনি। অর্পিতা কৌশিকের হাত ধরে শেষবারের মতো তাকিয়ে ছিল। তার চোখে ছিল এক শান্তি, যেন সে জানতো তার জীবন আর এই পৃথিবীতে নয়, কিন্তু কৌশিকের প্রতি তার ভালোবাসা থাকবে চিরকাল। তার শ্বাস শেষ হয়ে গেল, এক নিঃশ্বাসে তার হৃদয় থেমে গেল।
কৌশিকের হৃদয়ে যেন আছড়ে পড়ল এক অমোচনীয় বেদনা। সে জানত, কিছু সম্পর্ক সময়ের মাধ্যমে শক্তিশালী হয়, কিছু সম্পর্ক হয়েই যায় অমোচনীয়। অর্পিতা তার জীবন ছিল, তার হৃদয়ে থাকা এক একক প্রতিচ্ছবি। সে জানতো, এখন তাকে একাকী পথ চলতে হবে।
বিচ্ছেদ – শেষ সাক্ষাৎ
কৌশিক অর্পিতার শেষ যাত্রার সময় তার পাশে দাঁড়িয়ে ছিল, তার মুখে একটাই কথাই ছিল, “তুমি আমার সাথে থাকো, আমি জানি। একসাথে আমরা যেভাবে ছিলাম, সেভাবে সবসময় থাকবো। আমরা শুধু একে অপরকে ছাড়িনি, আর আমি কখনো তোমাকে হারাবো না।”
অর্পিতার শরীর তখন শীতল হয়ে গেছে, কিন্তু তার হাসি যেন এখনও কৌশিকের চোখের সামনে ছিল। সে জানতো, এই ভালোবাসার শক্তি তাকে কখনো ছেড়ে যাবে না।
কৌশিকের একক জীবন
অর্পিতার চলে যাওয়ার পর কৌশিকের জীবনে অনেক কিছুই বদলে গেল। কাজ, বন্ধু, পরিবার—সব কিছু ঠিকঠাক চলছিল, কিন্তু তার হৃদয় এক নিঃসঙ্গ জায়গায় পড়ে গিয়েছিল। সে জানতো, প্রেম কখনো হারিয়ে যায় না, তবে শরীরের উপস্থিতি থেকে চিরকালীন ভালোবাসা চলে যেতে পারে।
এবং সে একদিন উপলব্ধি করল—যতই তার জীবন পরিবর্তিত হোক, যতই সে এগিয়ে চলুক, অর্পিতা তার হৃদয়ের মধ্যে চিরকাল থাকবে, তার ভালোবাসা তার সঙ্গে থাকবে। হয়তো সে আর ফিরবে না, কিন্তু তার স্মৃতি, তার ভালোবাসা, তার প্রতিটি মুহূর্ত কৌশিকের জীবনকে নতুন করে পূর্ণ করেছিল।
শেষ কথা
একদিন, কৌশিক অর্পিতার স্মৃতি নিয়ে হাঁটতে বেরিয়ে আসলো, এবং সে জানত—অর্পিতা চলে গেলেও, তাদের সম্পর্কের ভালোবাসা কখনোই থামবে না। এটা ছিল জীবনের এক অবিস্মরণীয় অধ্যায়, যেখানে বিচ্ছেদ ছিল শেষ, কিন্তু ভালোবাসা ছিল চিরকালীন।
এভাবেই কৌশিকের জীবনে ফিরে এল অর্পিতার স্মৃতি, চিরকাল, অমর।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন