বিচ্ছেদ আর ফিরে আসা
কিছু সম্পর্ক শুরু হয় পূর্ণতা আর ভালোবাসার সাথে, আর কিছু সম্পর্ক শুরু হয় একে অপরকে বোঝার চেষ্টা দিয়ে। সারা জীবন ব্যস্ততার মাঝে, আমরা ভুলে যাই যে কিছু মানুষ আমাদের জীবনে চিরকাল থাকতে চায়। কিন্তু কখনো কখনো জীবনের পথ এতই মোড় নেয়, যে আমরা একে অপরকে হারিয়ে ফেলি।
প্রথম পরিচয়
অর্পিতা আর কৌশিকের পরিচয় ছিল কলেজে। প্রথম দেখায় মনে হয়েছিল, তারা একে অপরকে আগে থেকেই জানে। তাদের মধ্যে একটি অদৃশ্য বন্ধন ছিল, যেন দুজনেই একে অপরের জন্য তৈরি হয়েছিল। তাদের সম্পর্ক ছিল সহজ, স্বাভাবিক। কৌশিকের হাসি, অর্পিতার স্নিগ্ধতা—একসাথে সময় কাটানো, একে অপরকে জানার জন্য অনেক মুহূর্ত অপেক্ষা করতে হয়েছিল, কিন্তু কোনোদিন মনে হয়নি যে তাদের মধ্যে কোনো দূরত্ব আসবে।
তবে জীবন তো কোনো এক সমুদ্রের মতো—একসময় শান্ত থাকে, আর একসময় উত্তাল।
বিচ্ছেদ
একদিন, কলেজ শেষ হয়ে গেল। কৌশিকের কাজের জন্য তাকে শহরের বাইরে চলে যেতে হলো। অর্পিতা তখনো শিক্ষার্থীর জীবন কাটাচ্ছিল। তারা নিয়মিত যোগাযোগ রাখত, কিন্তু সময়ের সাথে সাথে দূরত্ব বাড়তে শুরু করল। ফোনের কথা, চিঠি, ভিডিও কল—সব কিছুই ধীরে ধীরে কমে গেল। একদিন, কৌশিক একরকম অভিমানে জানাল, “অর্পিতা, আমাদের মধ্যে যদি এই ফাঁক তৈরি হয়, তাহলে আমরা এই সম্পর্কটাকে বাঁচাতে পারবো না। আমি জানি, তোমার জীবনও এখন আলাদা পথ ধরে এগিয়ে চলেছে।”
অর্পিতার মনে হয়তো কষ্ট ছিল, কিন্তু সে কিছু বললো না। বুঝতে পেরে সে জানত, সম্পর্কের মধ্যে কোনো একটা ফাঁক তৈরি হয়েছে, এবং সেই ফাঁক কখনো ভরা যাবে না। তারা দুজনেই চলে গেল—নিজেদের জীবনযাপন করতে, ভিন্ন পথে।
ফিরে আসা
কয়েক বছর পর, অর্পিতা একজন প্রতিষ্ঠিত পেশাদার, সফল ক্যারিয়ার বানিয়েছে। তবে তার হৃদয়ে ছিল একটা শূন্যতা—যতই সে পূর্ণতা পেতে চেষ্টা করত, কিছু একটা তার ভেতরে অশান্তি সৃষ্টি করত। একদিন, এক পুরনো বন্ধু তার সঙ্গে যোগাযোগ করল। ফোনে জানালো, “কৌশিক ফিরে এসেছে শহরে। অনেক বছর পর, তার জীবনেও কিছু পরিবর্তন এসেছে। কিন্তু সে এখনও তোমাকে খুঁজে বেড়াচ্ছে।”
অর্পিতার চোখে জ্যোতি দেখা দিল। একদিকে যেমন তার মনে হত কৌশিকের সঙ্গে পুরনো সম্পর্কটা পুনরুদ্ধার করা উচিত, তেমনি অন্যদিকে তার ভয়ও ছিল। অনেক বছর কেটে গেছে, হয়তো এখন সব কিছুই বদলে গেছে।
কিন্তু ঠিক সেই মুহূর্তে, যখন অর্পিতা কৌশিকের কথা ভাবছিল, কৌশিক নিজের হাতে ফোন করে তাকে জানাল, “অর্পিতা, আমি তোমার কাছে আসছি, আমি জানি, এটা সময়ের দোষ, কিন্তু আমি এখন তোমার কাছে ফিরে আসতে চাই। আমি যা হারিয়েছি, সেটা আবার ফিরে পেতে চাই।”
ফিরে আসার অনুভূতি
একদিন কৌশিক অর্পিতার বাড়ির দরজায় দাঁড়িয়ে ছিল। তাকে দেখলেই মনে হচ্ছিল, তারা হয়তো কোনোদিন আলাদা হয়নি। তবে কৌশিকের চোখের দিকে তাকিয়ে অর্পিতা বুঝতে পারলো, সেই সময়ের পর এখন তাদের সম্পর্কের নতুন শুরুর প্রয়োজন।
তাদের দুজনের মধ্যে কোনো কথা ছিল না, শুধু একটা দৃশ্য ছিল—একটি গল্প, যা আবার নতুনভাবে শুরু হতে চলেছে। অর্পিতা কৌশিককে বলল, “এই বছরগুলো চলে গেছে, কিন্তু হৃদয়ের মাঝে তুমি কখনোই দূরে ছিলে না। তুমি ফিরে এসেছ, আর আমি জানি, এবার আমাদের সম্পর্ক আরও শক্তিশালী হবে।”
কৌশিক মুচকি হাসলো, “অর্পিতা, আমি যা হারিয়েছি, সেটার কদর করতে পারি এখন, যখন বুঝেছি, আমাদের মধ্যে সম্পর্কের জন্য সেই সময়টা জরুরি ছিল।”
এক নতুন শুরুর দিকে
এখন তারা একসঙ্গে সময় কাটাতে শুরু করল, সেই পুরনো হাসি আবার ফিরে এল। তারা একে অপরকে জানল নতুনভাবে, শিখল নতুন অভ্যেস, এবং একে অপরকে নতুন চোখে দেখল। কখনো কখনো, কিছু বিচ্ছেদ শুধুমাত্র সম্পর্ককে আরও গভীর করে তোলে।
অর্পিতা আর কৌশিক জানে, জীবন যতই পরিবর্তিত হোক, কখনো কখনো যে ভালোবাসা হারিয়ে যায়, তা আবার ফিরে আসতে পারে। বিচ্ছেদ হয়তো একসময় প্রয়োজন ছিল, কিন্তু ফিরে আসার সময়টা সব কিছু নতুন করে সাজানোর একটা সুযোগ দেয়।
এবং এভাবেই তারা নিজেদের সম্পর্ককে নতুন এক আঙ্গিকে পরিণত করল—একটি সম্পর্ক যেখানে বিশ্বাস, ভালোবাসা, এবং সম্মান ছিল অটুট।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন