সোনাবিদ কাব্য – কবিতা, ভালোবাসা আর জীবনের গভীর অনুভূতির এক অনন্য ভুবন। হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়া প্রেম, বিরহ, সুখ-দুঃখের কবিতাগুলো পড়তে ভিজিট করুন আমাদের ব্লগ।

Responsive Advertisement

শনিবার, ২৯ মার্চ, ২০২৫

চিঠির শেষ লাইন পর্ব ৩

চিঠির শেষ লাইন

পর্ব ৩: মুখোমুখি সত্য

বাইরে তখনো ঝিরঝির বৃষ্টি পড়ছে। আয়মান দরজার সামনে দাঁড়িয়ে রাইসার দিকে তাকিয়ে আছে—অবিশ্বাস আর বিস্ময়ের মিশ্র অনুভূতি নিয়ে। পাঁচ বছর পর, হঠাৎ করে সে ফিরে এসেছে!

রাইসার চোখে ক্লান্তি আর একরাশ অস্থিরতা। ভিজে চুলগুলো কপালে লেপ্টে গেছে। ঠোঁট কাঁপছে, যেন কিছু বলতে চায়, কিন্তু পারছে না।

আয়মান কিছুক্ষণ চুপচাপ তাকিয়ে থাকার পর অবশেষে বলে—

"ভিতরে আসবে?"

রাইসা মাথা নিচু করে ভেতরে ঢোকে। আয়মান তার জন্য এক কাপ গরম চা এনে দেয়, কিন্তু সে ছুঁয়েও দেখে না।

অবশেষে, রাইসাই প্রথম কথা বলে।

"কেমন আছো, আয়মান?"

এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়া যেন খুব কঠিন হয়ে পড়ে আয়মানের জন্য। এতদিনের জমে থাকা কষ্ট, অভিমান, এবং শূন্যতা একসাথে মনের মধ্যে ঝড় তোলে।

তারপরও শান্ত গলায় সে বলে, "ভালো আছি। অন্তত থাকার চেষ্টা করি। কিন্তু তুমি হঠাৎ এভাবে… কেন?"

রাইসা মাথা নিচু করে থাকে কিছুক্ষণ, তারপর ধীরে ধীরে বলে—

"তুমি আমাকে ভুলে গেছো ভেবেছিলাম। আমি চাইতাম তুমি ভুলে যাও, সুখে থাকো…"

আয়মান তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকায় তার দিকে।

"ভুলে যাই? এটা কি এত সহজ? রাইসা, একবারও ভেবে দেখেছো, যেদিন তুমি হুট করে চলে গেলে, সেদিন আমার কী অবস্থা হয়েছিল? আমি জানতেই পারলাম না কেন তুমি চলে গেলে! একটা কথাও বলোনি! আমি অপেক্ষা করেছিলাম, হয়তো তুমি একদিন ফিরে আসবে, একটা ব্যাখ্যা দেবে… কিন্তু তুমি কেবল হারিয়ে গেলে!"

রাইসার চোখে জল চলে আসে।

"আমি…আমি পারিনি, আয়মান। আমার বলার অধিকার ছিল না।"

আয়মান হতাশভাবে হাসে। "বলার অধিকার? তুমি কি জানো, আমি গত পাঁচ বছর ধরে প্রতি বছর তোমার জন্য চিঠি লিখেছি? কিন্তু কোনোবারই পাঠাতে পারিনি। কারণ, আমি জানতাম না কোথায় পাঠাবো!"

এই কথা শুনে রাইসা অবাক হয়ে তাকায়।

"চিঠি?"

আয়মান উঠে গিয়ে ড্রয়ার খুলে সবগুলো চিঠি টেবিলে রাখে। পুরনো হলদেটে খামগুলো একটার পর একটা সাজানো।

"এসব তোমার জন্য লেখা, কিন্তু কখনো তোমার হাতে পৌঁছায়নি," আয়মান বলে।

রাইসা চিঠিগুলো স্পর্শ করে, ধীরে ধীরে পৃষ্ঠাগুলো উল্টায়।

তারপর ফিসফিস করে বলে, "আমারও তোমাকে কিছু বলার ছিল। আমি যেতে চাইনি, আয়মান… আমি বাধ্য হয়েছিলাম!"

আয়মান বিস্মিত হয়ে বলে, "বাধ্য? কী বলছো তুমি?"

রাইসার চোখে কষ্টের ছাপ স্পষ্ট।

"সেদিন, যেদিন আমি তোমাকে বলেছিলাম যে আমি চলে যাচ্ছি, সেদিন সত্যিটা বলতে পারিনি। আমার পরিবার আমাদের সম্পর্ক মেনে নেয়নি, তারা আমাকে অন্য কোথাও পাঠিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। আমি চেষ্টা করেছিলাম, কিন্তু কিছুই করতে পারিনি। আর তোমাকে বললে তুমি হয়তো আমার জন্য সব কিছু ছেড়ে দিতে চাইতে, আর আমি সেটা চাইনি। তাই আমি নীরবে চলে গিয়েছিলাম…"

কিছু মুহূর্তের জন্য ঘরটা স্তব্ধ হয়ে যায়।

আয়মান কোনো কথা বলতে পারে না। এতদিন সে ভেবেছিল, রাইসা হয়তো ইচ্ছা করেই তাকে ছেড়ে গেছে। কিন্তু সত্যিটা এত কঠিন হবে, সেটা সে কল্পনাও করেনি।

অবশেষে, সে ফিসফিস করে বলে—

"তাহলে এখন কেন ফিরে এলে?"

রাইসার চোখে জল চিকচিক করে।

"কারণ, আমি চেয়েছিলাম তুমি আমাকে ভুলে যাও, কিন্তু পারোনি। আমিও পারিনি, আয়মান। তুমি ছাড়া আর কিছুই আপন মনে হয়নি আমার কাছে। তাই শেষবার তোমার কাছে এসেছি… যদি এখনও একটু জায়গা থেকে থাকে আমার জন্য…"

আয়মান চুপ করে থাকে। তার সামনে তার ভালোবাসা দাঁড়িয়ে আছে, ফিরে এসেছে। কিন্তু এত কষ্টের পর, এতটা সময় হারিয়ে যাওয়ার পর… সে কি আবার সব শুরু করতে পারবে?

সে চিঠির শেষ লাইনের দিকে তাকায়।

আজ কি সে সেই লাইনটি লিখতে পারবে?

(চলবে…)


পরবর্তী পর্ব:
আয়মান কি শেষ লাইন লিখবে? নাকি অতীতের কষ্ট তাদের সম্পর্কের নতুন শুরু হতে দেবে না? শেষ পর্বে মিলবে চূড়ান্ত উত্তর!

কোন মন্তব্য নেই:

Subscribe Us

Main Slider

SoraBook

Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit. Vestibulum rhoncus vehicula tortor, vel cursus elit. Donec nec nisl felis. Pellentesque ultrices sem sit amet eros interdum, id elementum nisi ermentum.Vestibulum rhoncus vehicula tortor, vel cursus elit. Donec nec nisl felis. Pellentesque ultrices sem sit amet eros interdum, id elementum nisi fermentum.




Comments

যোগাযোগ ফর্ম

নাম

ইমেল *

বার্তা *