চিঠির শেষ লাইন
পর্ব ২: ফেলে আসা সময়
আয়মান অনেকক্ষণ চুপচাপ বসে থাকে। চিঠির শেষ লাইন আজও অসম্পূর্ণ। পাঁচ বছর ধরে প্রতিবার সে চিঠি লেখে, কিন্তু কোনোবারই সাহস করে পাঠাতে পারেনি। কেন? কারণ হয়তো ভয়, হয়তো অনিশ্চয়তা।
সে জানে না, রাইসা এখন কোথায় আছে, কেমন আছে। কিন্তু একটা ব্যাপার নিশ্চিত জানে—তার মনের গভীরে এখনো রাইসার স্মৃতি সেই আগের মতোই তাজা।
"তুমি কি কোনোদিন আমার চিঠিগুলো পাবে?"
নিজের মনে প্রশ্ন করে আয়মান। কিন্তু উত্তর আসে না।
ড্রয়ারের ভেতর রাখা চিঠিগুলোর দিকে তাকিয়ে থাকে সে। প্রতিটা চিঠির খামের ওপরে সুন্দর করে রাইসার নাম লেখা, কিন্তু কোনো খামে ডাকটিকিট লাগানো হয়নি।
(১)
পাঁচ বছর আগে…
রাইসা আর আয়মান তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের শেষ বর্ষের ছাত্র। দুজনেই স্বপ্ন দেখতো একসাথে থাকার, একসাথে পথচলার।
শহরের ব্যস্ত রাস্তাগুলো তখন তাদের জন্য ছিল একেকটা গল্পের পাতা। সন্ধ্যার আকাশের নিচে দুজন হেঁটে বেড়াতো, কথা বলতো নিরন্তর।
রাইসার স্বপ্ন ছিল সাংবাদিক হওয়ার। আয়মানের স্বপ্ন ছিল লেখক হওয়া।
একদিন ক্যাম্পাসের পুরনো গাছতলায় বসে রাইসা আয়মানকে বলেছিল—
"জানো, যদি কোনোদিন আমি হারিয়ে যাই, তুমি আমার জন্য চিঠি লিখবে?"
আয়মান হেসে বলেছিল, "চিঠি কেন? আমি পুরো একটা বই লিখে ফেলবো তোমার জন্য!"
কিন্তু তখন সে জানতো না, সত্যিই একদিন তাকে শুধু চিঠিই লিখতে হবে।
(২)
সেই ঝড়ের রাতে সব বদলে গেলো।
ক্লাস শেষ হওয়ার পর রাইসা তাকে ফোন করেছিল—
"আমাকে এখনই দেখা করতে হবে তোমার সঙ্গে। জরুরি।"
কণ্ঠটা অস্বাভাবিক লাগছিল। আয়মান চিন্তিত হয়ে ছুটে গিয়েছিল নির্দিষ্ট জায়গায়।
বৃষ্টি ঝরছিল মুষলধারে। ছাতার নিচে দাঁড়িয়ে রাইসা বলেছিল, "আমাকে যেতে হবে, আয়মান। আমি আর তোমার জীবনে থাকবো না।"
আয়মান স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল।
"মানে? কোথায় যাচ্ছো? কেন?"
রাইসা কোনো ব্যাখ্যা দেয়নি। শুধু বলেছিল, "সবকিছু ভুলে যাও। এটা আমাদের ভাগ্য ছিল না।"
তারপর সে চলে গিয়েছিল অন্ধকারের ভেতর।
সে রাতে আয়মান বুঝতে পারেনি, কী কারণে রাইসা চলে গেল। সে কোনোদিন কারণ জানতেও পারেনি।
কিন্তু সেদিন থেকেই, প্রতি বছর এই দিনে আয়মান রাইসার উদ্দেশ্যে চিঠি লেখে… এবং প্রতিবার শেষ লাইন লিখতে গিয়ে থেমে যায়।
(৩)
আজ পাঁচ বছর পর, আয়মানের জীবন অনেক বদলে গেছে। সে এখন একজন প্রতিষ্ঠিত লেখক। কিন্তু একটা জিনিস বদলায়নি—রাইসার প্রতি তার অনুভূতি।
হঠাৎ করেই দরজায় শব্দ হয়।
টক টক টক!
কে আসতে পারে এই রাতে?
আয়মান দরজা খুলে চমকে যায়।
তার বাড়ির সামনে, বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে দাঁড়িয়ে আছে এক চেনা মুখ।
রাইসা।
পাঁচ বছর পর, হঠাৎ ফিরে এসেছে সেই হারিয়ে যাওয়া মানুষটি।
(চলবে…)
পরবর্তী পর্ব:
রাইসা কেন ফিরে এসেছে? তার চলে যাওয়ার আসল কারণ কী? আয়মান কি এবার চিঠির শেষ লাইন লিখতে পারবে?
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন