ভালবাসা আর সময়ের বাঁধন
(পর্ব ৪: বিচ্ছেদ, বিয়ে ও ফিরে আসা!)
১
রূপার চলে যাওয়ার পর রাফির জীবনটা যেন ফাঁকা হয়ে গেল। স্কুল শেষ হয়ে গেল, পড়াশোনা চলতে থাকল, কিন্তু কোথাও যেন কিছু একটা কম ছিল—একটা শূন্যতা, একটা অপূর্ণতা।
রূপা মাঝে মাঝে দেশে ফোন করত, কিন্তু রাফির সঙ্গে কথা হতো না। তার পরিবার চাইত না এই সম্পর্কটা থাকুক। রাফিও কখনো主动 করে যোগাযোগ করেনি।
কিন্তু ভালোবাসা কি কখনো দূরত্ব মেনে নেয়?
২
একদিন হঠাৎ রাফির বাড়িতে এক অপ্রত্যাশিত ঘটনা ঘটল।
রাতে বাবা-মা রাফিকে ডেকে বললেন,
— "তোর আর রূপার সম্পর্কের কথা আমরা জানি।"
রাফি চমকে গেল।
— "কে বলল?"
— "এটা জানার জন্য কাউকে লাগবে না! তোর চেহারায়ই লেখা আছে!"
রাফি মাথা নিচু করে থাকল।
বাবা কড়া গলায় বললেন,
— "এ সম্পর্ক নিয়ে যেন আর কোনো স্বপ্ন না দেখিস। রূপার পরিবার ওকে দেশের বাইরে পাঠিয়েছে, তারা এই সম্পর্ক মেনে নেবে না। আর তোরও নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবা উচিত!"
রাফি চুপ। সে জানত, পরিবারের সঙ্গে তর্ক করে লাভ নেই।
কিন্তু পরদিনই সে এমন একটা খবর পেল, যা ওর হৃদয় ভেঙে দিল।
৩
রূপার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে!
তার পরিবার লন্ডনে একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ীর সঙ্গে বিয়ের দিন ঠিক করে ফেলেছে।
রাফি যখন এই খবর শুনল, তখন তার মনে হলো, কেউ যেন তার বুকের ভেতর থেকে সব অনুভূতি টেনে বের করে নিয়েছে।
সে কি কিছু করতে পারবে?
না, পারবে না।
৪
বিয়ের দিন এগিয়ে আসছিল।
রূপা ফোন করতে চেয়েছিল, কিন্তু পরিবারের বাধার কারণে পারছিল না। অবশেষে, বিয়ের আগের রাতে সে নিজের এক বান্ধবীর ফোন নিয়ে রাফিকে কল করল।
— "রাফি..."
রাফি কিছু বলল না। শুধু নিঃশব্দে শ্বাস নিল।
— "আমি জানি, তুমি জানো... আমি... আমি কিছু করতে পারছি না।"
রাফি চুপ।
রূপা কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলল,
— "তুমি যদি বলো, আমি চলে যাব... আমি সব ছেড়ে তোমার কাছে চলে যাব!"
রাফি চোখ বন্ধ করল। বুকের ভেতর কান্না চেপে বলল,
— "না রূপা, তুমি সুখী হও..."
ফোনের ওপাশে কয়েক মুহূর্ত নীরবতা, তারপর রূপা ধীরে ধীরে বলল,
— "ভালো থেকো..."
কল কেটে গেল।
৫
বিয়ের দিন এলো। বিশাল আয়োজন, অতিথির ভিড়, সবার মুখে আনন্দের ছাপ। কিন্তু ঠিক সেই মুহূর্তে যা ঘটল, তা কারো কল্পনাতেও ছিল না!
বিয়ের আসরেই বরপক্ষ থেকে খবর এলো—বর এই বিয়ে করতে রাজি নয়!
সবার মুখে বিস্ময়!
বিয়ের মঞ্চে বসে থাকা রূপার বাবার মুখ কঠিন হয়ে গেল। তিনি কঠোর কণ্ঠে বললেন,
— "এটা সম্ভব নয়! আমরা সব আয়োজন শেষ করে ফেলেছি। এখন হুট করে বিয়ে বন্ধ করা যাবে না!"
কিন্তু বরপক্ষ স্পষ্ট জানিয়ে দিল—তাদের ছেলে এই বিয়ে করতে চায় না।
বিয়ে ভেঙে গেল!
রূপা অবাক হয়ে গেল। সে তো নিজে কিছু করেনি, তাহলে এমন কী ঘটল?
কিন্তু এর উত্তর কেউ জানত না।
৬
বিয়ে ভেঙে যাওয়ার পর রূপাকে দেশে ফিরিয়ে আনা হলো। পরিবারের সবাই দুঃখী, হতাশ। কেউ বুঝতে পারল না, কেন এমন হলো।
কিন্তু রূপা মনে মনে জানত—এই সম্পর্কের জন্যই হয়তো ভাগ্য তাকে একবার সুযোগ দিয়েছে।
রাফি তখনো জানত না, রূপা দেশে ফিরে এসেছে।
রূপা কি এবার রাফির কাছে যাবে?
নাকি পরিবারের বাধায় আবার আলাদা হয়ে যাবে তারা?
চলবে...
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন