ভালবাসা আর সময়ের বাঁধন
(পর্ব ৬: আগের মতো ফিরে আসা...)
১
রূপা আর রাফির মধ্যে এতদিন যে দূরত্ব তৈরি হয়েছিল, সেই দূরত্বকে ভেঙে ফেলার একমাত্র উপায় ছিল তাদের হৃদয়ের মধ্যে লুকিয়ে থাকা এক গভীর আকাঙ্ক্ষা। তারা একে অপরকে ছেড়ে যেতে পারেনি, যদিও বাস্তবতা তাদের জন্য কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছিল।
রূপার বাড়ির অবস্থাও আর আগের মতো ছিল না। তার বাবা-মা তাদের সম্পর্ক নিয়ে চুপ থাকলেও, তাদের চোখের মধ্যে অসন্তুষ্টি ছিল। রূপা জানত, সবার সামনে দাঁড়িয়ে কিছু বলা কিংবা করার সাহস আর নেই। তবে তার একটিই আশ্বাস ছিল—রাফি, তার ভালোবাসা, কখনোই হারিয়ে যায়নি।
রাফি একদিন রাতে নিজের মনোভাব ঠিক করে ফেলল। সে জানল, কষ্ট ছাড়া কিছুই পাওয়া যায় না। যদি সত্যি ভালোবাসে, তবে সেই ভালোবাসা ফিরিয়ে আনতে তার সব কিছুই বলার সাহস থাকতে হবে।
২
এদিন, বিকেল বেলায়, রূপা আবার জানালার কাছে দাঁড়িয়ে ছিল। এবার সে জানালা বন্ধ রেখেছিল, যেন কেউ দেখতে না পায়।
রাফি মৃদু পদক্ষেপে ঘরের দিকে এগিয়ে গেল। রূপা যখন জানালা থেকে নিচে তাকাচ্ছিল, তখনই সে তার নাম ভেঙে ডাকল,
— "রূপা!"
রূপা চমকে উঠল। সে জানত, একদিন রাফি আসবে।
হৃদয়ের তাড়া তাকে আবার পথে টেনে আনল। সে জানত, এই মুহূর্তে জীবনের সমস্ত কিছু ঝুঁকি নিয়ে, এই মুহূর্তে রাফির কাছে যেতে হবে।
রূপা জানালা খুলল। তার চোখে অভ্যস্ত কিন্তু এক অদ্ভুত চকমক।
— "তুমি...?"
রাফি মৃদু হাসল,
— "তোমার কাছে আসতে পেরে আমি শান্তি পাচ্ছি, রূপা। আর, আমি জানি, তোমার হৃদয়ও কাঁপছে।"
রূপা এক পা সামনে এগিয়ে এসে বলল,
— "তুমি কি জানো, আমি তোমাকে হারিয়ে ফেলতে পারিনি?"
রাফি প্রায় কান্না ধরে রাখল,
— "আমি জানি। জানতাম, আমাদের প্রেম কখনো শেষ হবে না। শুধু দরকার ছিল সাহসের।"
৩
তাদের মাঝের দূরত্ব হঠাৎ করেই বিলীন হয়ে গেল। একে অপরের দিকে তাকিয়ে তাদের চোখের ভাষা বলছিল—এই ভালোবাসার মাঝে কোনও বাধা নেই।
কিন্তু সমস্যা এখানেই, তাদের পরিবার কখনোই এই সম্পর্ক মেনে নেবে না। রূপার পরিবার এখনও ওই সম্পর্কের বিপক্ষে ছিল। কিন্তু তারা জানত, একে অপরকে ছাড়া বাঁচা সম্ভব নয়।
রূপা বলল,
— "আমরা একসাথে থাকতে পারব না, যদি তাদের পছন্দের সাথে না মেলে।"
রাফি মাথা নেড়ে বলল,
— "তবে, আমাদের ভালোবাসাকে প্রমাণ করতে হবে। আমি তোমার পাশে থাকব, যতটুকু পারি।"
৪
পরবর্তী কিছু দিন পর, রাফি আর রূপা দুজনেই একে অপরকে আরও গভীরভাবে অনুভব করতে লাগল। তাদের একসাথে কাটানো মুহূর্তগুলি যেন কোনো রূপকথার মতো ছিল। স্কুলের দিনের সেই বন্ধুত্ব, আবার ফিরে আসল প্রেমে।
একদিন রূপা বলল,
— "আমি জানি আমাদের ভালোবাসা হয়তো সবাই বুঝবে না, কিন্তু আমি তো জানি—তুমি আমার জন্য সেরা।"
রাফি হাসল,
— "তুমি জানো, রূপা, ভালোবাসা কেবল দুজন মানুষের মধ্যে হয় না, তা অনেকটা সময়, অনেক বাঁধা, অনেক কষ্টের মধ্য দিয়ে আসে। কিন্তু একদিন, তা সার্থক হয়।"
৫
তাদের সম্পর্কের শুরুর দিন থেকেই একে অপরের পাশে থাকা, একে অপরকে বুঝে চলা ছিল রাফি ও রূপার মধ্যে এক অবিচ্ছেদ্য বন্ধন। তারা জানত, একদিন নিজেদের অবস্থান সব বাধা পেরিয়ে মেনে নেবেই।
একদিন, রূপার পরিবারের সঙ্গে কথা বলে রাফি তার ভালোবাসা ঘোষণা করল। একটু ভয়ে ভয়ে হলেও, সে জানত—সে যা চায়, তাও সে কিছুতেই ছাড়তে পারে না।
কিছু দিন পর, রূপার বাবা-মা একটু ভাবনা চিন্তা করে শেষমেষ তাদের সম্পর্ক মেনে নিল।
এই যাত্রা শুরু হয়েছিল ছোট্ট একটা চাহনি দিয়ে, আর শেষ হল সম্পর্কের সব বাধা দূর হয়ে একে অপরের মধ্যে এক অটুট ভালোবাসা পেয়ে।
কিন্তু এটা কি শেষ? নাকি এই সম্পর্কের পথে আরও বড় কোনো বাঁধা আসবে?
চলবে....
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন