ভালবাসা আর সময়ের বাঁধন
(পর্ব ৭: পালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত, এবং এক অপ্রত্যাশিত দুর্ঘটনা...)
১
রাফি আর রূপা ঠিক করল, তাদের ভালোবাসার কাছে কোনও বাধা আর থাকবে না। পরিবার তাদের সম্পর্ক মেনে নেবে না—তবে তা আর তাদের থামাতে পারবে না। তারা জানত, একে অপরকে ছাড়া আর বাঁচা সম্ভব নয়।
রূপা একদিন রাফির কাছে এসে বলল,
— "আমরা যদি পালিয়ে যাই? কোথাও চলে যাই, যেখানে আমাদের ভালোবাসা মেনে নেয়?"
রাফি কিছু না বলে, এক পা এগিয়ে গিয়ে রূপাকে চোখে চোখ রেখে বলল,
— "তুমি যদি বলো, আমি এক মুহূর্তও সময় নেব না। তুমি আর আমি, দুজনে একে অপরের কাছে... সবকিছু রেখে পালিয়ে যাব।"
এই কথাগুলো যেন একসাথে সারা জীবনের জন্য তাদের সিদ্ধান্তে রূপান্তরিত হয়ে গেল।
২
পরিবারের কাছে তারা যা চাইছিল, তা পাওয়া সম্ভব ছিল না। তাদের প্রেমকে কোনভাবেই স্বীকৃতি দেওয়া হবে না। সুতরাং, সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো—পালিয়ে যাওয়া।
রূপা, তার পরিবারকে বোলার সাহস করছিল না। রাফির বাড়ির সদস্যরা আগেই সম্পর্কটা জানত, তবে তারা বুঝতে পারছিল না রাফি এতটা এগিয়ে যাবে। তবে শেষপর্যন্ত, তাদের বন্ধন তাদের একত্রিত করার জন্যই প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়েছিল।
এদিন বিকেলে, রূপা আর রাফি একে অপরকে দেখে হাসল। তারা জানত, তাদের একসঙ্গে থাকা কখনোই সহজ ছিল না, কিন্তু তারা একে অপরকে ছাড়া বাঁচতে পারবে না।
রূপা বলল,
— "তুমি কি প্রস্তুত?"
রাফি মৃদু হেসে বলল,
— "শুধু তোমার হাত ধরে হাঁটতে পারলেই আমি প্রস্তুত।"
৩
তারা দুই জনেই বাড়ির বাইরে চলে গেল, নীরবে। দুজনেই মনের মধ্যে জানত, হয়তো তাদের এই পালানো জীবনের শেষ ভ্রমণ হবে।
সন্ধ্যার দিকে, তারা দুজন এক ছোট শহরে পৌঁছাল। সেখানে দুজনের জীবন নতুনভাবে শুরু হবে—একটি নতুন দেশ, একটি নতুন শহর, নতুন পরিচিতি। তাদের কোনো এক জায়গায় গিয়ে নতুন জীবন শুরু করতে হবে।
তাদের মাথায় ছিল একটাই উদ্দেশ্য—একসাথে থাকার প্রতিশ্রুতি।
রাফি আর রূপা ঠিক করল, তাদের নিজেদের মতো করে একটি ছোট্ট বিয়ের অনুষ্ঠান করবে। শহরের বাইরে এক নির্জন জায়গায় তারা বিয়ের সমস্ত আয়োজন করল।
৪
বিয়ের দিন, সকালে রূপা সাদা শাড়িতে সাজল। রাফি কাঁধে সুতি শার্ট পরেছিল। তারা একে অপরের দিকে তাকিয়ে ছিল, তাদের চোখের মধ্যে একটি অদ্ভুত প্রেমের মায়া ছিল। এমন কিছু মনে হচ্ছিল, যেন তারা পৃথিবীর একমাত্র মানুষ—এখানে আর কেউ নেই।
তাদের প্রিয় গান বাজছিল, আর শপথ নেওয়ার সময় তারা একে অপরের দিকে তাকিয়ে বলল,
— "এখন থেকে তুমি আমার, আর আমি তোমার।"
এই ছিল তাদের স্বপ্ন, তাদের জীবনের প্রথম বিয়ে। কিন্তু ঠিক যখন তারা এই আনন্দের মুহূর্তটি উপভোগ করছিল, তখনই ঘটনা অপ্রত্যাশিত মোড় নিল।
৫
তারা বিয়ের পর, গাড়ি নিয়ে শহরে ফিরছিল। তাদের হাতে ছিল সুখের প্রতিশ্রুতি, ভবিষ্যতের আশা। হঠাৎ, রাস্তায় একটি বিশাল ট্রাক এসে গতি বাড়িয়ে চলছিল।
রাফি সজাগ হয়ে গাড়ি ঘুরাতে চাইল, কিন্তু সে কিছুই করতে পারল না। ট্রাকের ধাক্কায় গাড়িটি উলটে গেল।
রূপার চিৎকারের শব্দ শুনে রাফি শেষ পর্যন্ত তার হাতে শক্ত করে ধরে রেখেছিল। কিন্তু জীবন খুবই নিষ্ঠুর।
৬
রূপা আহত হয়ে পড়ল। রাফি তার পাশে এসে দাঁড়িয়ে তার হাত ধরে বলল,
— "রূপা, তুমি আমাকে ছাড়ো না... তুমি চলে গেলে, আমি কীভাবে বাঁচব?"
রূপার মুখে একটা নিঃশ্বাস ছাড়া আর কিছুই আসছিল না। তার শরীর কাঁপছিল, কিন্তু তার চোখে এক ধরনের শান্তি ছিল—সে জানত, সে রাফির কাছে ছিল, আর তাদের ভালোবাসা ছিল।
কিন্তু শেষমেশ, রূপা চোখ বন্ধ করে ফেলল।
রাফি তার হাত শক্ত করে ধরে রেখেছিল, কিন্তু কিছুই করতে পারল না।
৭
রূপার মৃত্যু রাফির জীবনে এক অপ্রতিরোধ্য শূন্যতা সৃষ্টি করল। রাফি, যার কাছে পৃথিবী ছিল রূপার মধ্যে, আজ সে একা হয়ে গেল।
রূপার প্রতি তার ভালোবাসা কখনো হারাবে না, সে জানত। কিন্তু জীবনের অপ্রত্যাশিত পরিণতি তাকে জানিয়ে দিল—ভালোবাসা কখনো হারায় না, কিন্তু জীবন প্রতিশ্রুতি রাখে না।
এটা ছিল গল্পের শেষ পর্ব—একটা অদ্ভুত, মর্মান্তিক পরিণতি। রূপা আর রাফির প্রেমের গল্প এইভাবে শেষ হলো। তাদের সম্পর্কের গভীরতা কোনো কিছুই মুছে ফেলতে পারেনি, তবে সেই সম্পর্ক জীবনের গতিপথের সঙ্গে হারিয়ে গেল।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন